০৪। কুর'আন নাজিলের শুরু


কুরআন নাজিলের ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ তা'আলা মোহাম্মদ -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্যে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। ইতিহাসের প্রমান অনুযায়ী প্রথম ওহী এসেছিল রমজান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে। মোহাম্মদ -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- এর বয়স ছিল তখন ৪০ বছর ৬মাস ১২ দিন। 

হযরত আয়শা -রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহা- থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- এর ওপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা দিনের আলোর মত তাঁর জীবনে প্রতিভাত হত। এক টুকরো দৃশ্যমান ছবি তাঁর অন্তরে সদা ভাস্বর হয়ে থাকত। জিব্রাইল -'আলাইহিস সালাম- এর মাধ্যমে ওহী প্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে উঠেন, হেরা গুহায় নিভৃতে আল্লাহ তা'আলার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। এভাবেই হেরা গুহায় তাঁর রাত আর দিন কাটে। খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে সেসব নেওয়ার জন্যই তিনি শুদু বাড়ি ফিরেন। মাঝে মাঝে প্রিয় স্ত্রী খাদিজা -রাদিয়াল্লাহু আনহা-ও  হেরা গুহায় তাঁর খাবার দিয়ে আসেন। এমনি করে একদিন তাঁর কাছে আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইল -আলাইহিস সালাম- এসে গম্ভীর কন্ঠে তাঁকে বললেন, 'ইক্রা' -পড়ুন। মোহাম্মদ -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। উদ্বেলিত কন্ঠে বললেন 'আমি তো পড়তে জানিনা।' জিব্রাইল (আ:) তাঁকে বুকে চেপে ধরে আবার বললেন, পড়ুন।
তিনি পুনরায় বললেন, আমি তো পড়তে জানিনা। জিব্রাইল (আ:) আবার তাঁকে বুকে জড়িয়ে চেপে ধরলেন এবং বললেন, পড়ুন। তৃতীয় বার যখন ফেরেশতা তাঁকে বুকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন, এবার মোহাম্মদ -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- ওহীর প্রথম পাঁচটি আয়াত পড়লেন। অত:পর তিনি ঘরে ফিরলেন। প্রিয়তমা সঙ্গীকে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। হযরত খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা- প্রিয় নবীকে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিলেন। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন কাঁপছেন কেন?
রাসুল -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- বললেন, একজন অভিনব ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানিনা। তারপর তিনি তিন তিন বার আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন, অত:পর তার সাথে আমি পড়তে শুরু করলাম। তাঁর কথা শুনে খাদিজা -রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা- বললেন, আপনার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।  কেননা আপনি মানুষের উপকার করেন, মানবতার সেবা করন, এতিমদের আশ্রয় দেন, মহান আল্লাহ আপনার কি কোনো ক্ষতি করতে পারেন!
খাদিজা -রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা- প্রিয় নবীকে তাঁর চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন। ওরাকা ইবনে নওফেল ছিলেন ঈসায়ী ধর্মের আলেম এবং হিব্রু ভাষার পন্ডিত ব্যক্তি। সে সময় তিনি বয়সের ভারে আক্রান্ত এবং দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছিলেন। হযরত খাদিজা -রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা- বললেন, ভাইজান, আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। রাসুল -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- তাকে হের গুহার সব ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। শুনে অরকা বললেন, তিনি সে-ই দূত জিব্রাইল, যিনি হযরত মুসা -আলাইহিস সালাম- এর কাছে ওহীর বাণী নিয়ে আসতেন। হায়, আমি যদি সে সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতাম যখন তোমার কওমের লোকেরা তোমাকে জন্মভূমি থেকে বের করে দিবে। রাসুল -সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম- অবাক হয়ে বললেন, কেন আমাকে তারা মাতৃভূমি থেকে বের করে দিবে? ওরাকা বললেন, তুমি যে ওহী লাভ করেছ, এ ধরনের ওহী যখনই কোনো নবী পেয়েছেন তাঁর সাথে এভাবেই স্বজাতির পক্ষ থেকে শত্রুতা করা হয়েছে। যদি আমি সে দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আমি তোমার সাহায্যে এগিয়ে আসব।



{বি:দ্র: লেখায় কোনো প্রকার ভুলত্রুটি থেকে থাকলে পারলে শুদ্রে নিবেন না হলে আমাদের  মেইল করবেন ইনশাআল্লাহ আমরা তা অনতিবিলম্বে ঠিক করে দিব।}
আর্টিকেল টি পরা মাত্র শেয়ার করতে ভুল করবেন না মনে রাখবেন আপনার দ্বারা জানিত যদি কেও একটা আমল ও করে তাহলে তার সওয়াব আপনি পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আর নিন্মে দেওয়া হাদিস টির কথা মনে রাখবেন সব সময়।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান 

সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি 

হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

0 comments: